০৫ মে ২০২৪, ০৩:১৩ পূর্বাহ্ন, ২৫শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, রবিবার, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের ক্রাইম ডেক্স : মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলির মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল আগামী শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন এই ঘোষণা দেওয়া পর আজ বৃহস্পতিবার থেকেই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সেন্টমার্টিনে।
আজ সকাল থেকে পর্যটকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা ও আতঙ্ক লক্ষ্য করা গেছে। অনেকের প্রশ্ন ‘ফিরতি পথে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হবে কিনা?’ কিংবা মিয়ানমারের দুই বাহিনীর অস্থিরতা টেকনাফের দমদম জেটি ঘাটের কাছাকাছি চলে এসেছে কিনা?’ তবে রিসোর্ট ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা আগত পর্যটকদের বিভিন্নভাবে আশ্বস্ত করছেন।
সেন্টমার্টিনের ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে ৯ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই দ্বীপে অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পর্যটন মৌসুম চলে। সাগর শান্ত থাকার কারণে পর্যটকেরা নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারেন। কিন্তু এই মৌসুমেই একের পর এক বাধার সামনে পড়ছেন ব্যবসায়ী ও পর্যটকেরা। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে চাঙা হয়ে ওঠা পর্যটন ব্যবসা মাঝপথে বাধার সম্মুখীন হওয়ায় এই ধকল কাটিয়ে ওঠা নিয়ে শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে জাহাজ বন্ধের খবরে মুহূর্তের মধ্যেই হোটেল রিসোর্ট বুকিং বাতিল হতে শুরু হয়। একই সঙ্গে চাপ বাড়ে ফিরতি বাস টিকিটের। সুযোগ বুঝে বাস এজেন্টরা দেড় থেকে দুই গুণ ভাড়া আদায় করছেন যাত্রীদের কাছ থেকে। তা ছাড়া গতকাল রাতে টেকনাফ ঘাটে রওনা হওয়া বেশ কয়েকজন পর্যটক কক্সবাজারে নেমে গেছেন বলে খবর পাওয়া যায়। বাতিল হচ্ছে অগ্রিম বুকিং করে রাখা জাহাজ ও রিসোর্ট।
ঢাকা থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থী নাজমুল ও রুবেলের সঙ্গে কথা হয়। আলাপচারিতায় তাঁরা বলেন, ‘বাসের ফেরার টিকিট পাচ্ছি না। আমাদের ১০ তারিখ পর্যন্ত থাকার পরিকল্পনা ছিল। এখন ৯ তারিখেই চলে যাব। টিকিট না পেলে কক্সবাজার থেকে উঠতে হবে বাসে। বাড়ির সবাই মোবাইল ফোনে কল দিয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন, দুশ্চিন্তা করছেন। সব মিলিয়ে ঘুরতে আসার আমেজই নষ্ট হয়ে গেছে।’
সেন্টমার্টিনের পশ্চিম বিচের নীল দিগন্তে নামের রিসোর্টের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর বলেন, ‘করোনার মধ্যে ২০২১ ও ২২ সালে ব্যবসা মোটামুটি হয়েছিল। গত বছর জাহাজ নিয়ে কারসাজি আর এই বছর হরতাল অবরোধ আর নির্বাচনে ব্যবসা ভালো হয়নি। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যা শুরু হয়েছিল সেটা যুদ্ধের কারণে শেষ। আমাদের ব্যবসায়ীদের জন্য কোনো স্বস্তির খবর নেই।’
সমুদ্র কুটির রিসোর্টের ইনচার্জ হেলাল বলেন, ‘আমাদের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব রুম বুকিং ছিল। আজ সকাল থেকে একে একে বাতিল হচ্ছে বুকিং। হরতাল, অবরোধ ও নির্বাচনের কারণে পর্যটক আনাগোনা ছিল খুবই কম। ভেবেছি ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ভালো ব্যবসা হবে। কিন্তু এখনই সব শেষ। এখন স্টাফদের কক্সবাজার পাঠিয়ে দিতে হবে। কারণ এখানে থাকলে তাঁদের পেছনে অনেক খরচ হয়।’
তবে গুঞ্জন রয়েছে টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচল না করলেও কক্সবাজার থেকে জাহাজ চলতে পারে। কারণ সেই জাহাজ মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান করে না। কোনারপাড়া এলাকার ফটোগ্রাফার মিলন হোসেন বলেন, ‘পর্যটন মৌসুমের আগে আমরা যেমন ছিলাম ওমনই থাকব। কী আর করার আছে আমাদের? এই কয়টা মাস আয় করেই তো সারা বছর চলি।’
সেন্টমার্টিনগামী কাজল জাহাজের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের জাহাজ আপাতত ৯ তারিখ পর্যন্ত চলবে। নতুন সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত অন্যত্র সরে থাকবে। প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করার নেই আমাদের। নদীতে পানি কম বলে বেশ কিছুদিন জাহাজ বন্ধ ছিল। এখন আবার যুদ্ধের কারণে বন্ধ হবে।’
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হয়। এই আয়ের ওপরেই বাকি সাত মাস স্থানীয় লোকজন চলে। কিন্তু এবার অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। মার্চের আগে ফের জাহাজ চালু হবে কিনা জানি না। আর শোনা যাচ্ছে কক্সবাজারের জাহাজ চলবে। তবে এই বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত নই আমরা।’